Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ছবি
শিরোনাম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
বিস্তারিত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি পৃথিবীর দীর্ঘতম অখন্ডিত সমুদ্র সৈকত। ১২০ কিঃমিঃ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ সমুদ্র সৈকতে বৈশিষ্ট হলো পুরো সমুদ্র সৈকতটি বালুকাময়, কাদা অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক ঝিনুক নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপণি বিতান, অত্যাধুনিক হোটেল মোটেল কটেজ, নিত্য নব সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেট সমূহে পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার শহর পর্যটন মৌসুমে প্রাণচাঞ্চল্য থাকে। সুইজারল্যান্ডের "New Seven Wonderers Foundation" নামীয় বার্নাড ওয়েবার এর ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২০০০ সালে ২য় বারের মত বিশ্বের প্রাকৃতিক নতুন সপ্তাশ্চার্য নির্বাচন প্রতিযোগিতায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি কয়েকবার শীর্ষ স্থানে ছিল। শীর্ষ স্থান ধরে রাখার জন্য প্রচার প্রচারণা কম ছিল বলে অনেকে মনে করে থাকেন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে চ্যানেল আই আদিবাসী মেলা আয়োজন করে সরাসরি সম্প্রচার করেও দেশি-বিদেশি ভোটারদের ভোট অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। ফলশ্রুতিতে মায়াবী সমুদ্র সৈকতটি শীর্ষ স্থান কেন, কোন স্থানই অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তাই বলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মান সম্মান হানি হয়েছে? নিশ্চয়ই নয়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটি তার স্ব-মহিমায় সমুজ্জ্বল রয়েছে। এর সৌন্দর্য কোনভাবে কোনদিন হানি করা যাবে না। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও চ্যানেল আই যৌথ উদ্যোগে ২য় বারের মতো ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ তারিখ লাবনী সৈকতে আয়োজিত আদিবাসী মেলায় অন্যতম ইভেন্ট আদিবাসী সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কক্সবাজারের রাখাইন মেয়ে মিস ফ্রুমাসে সেরা প্রিয়দর্শিনী নির্বাচিত হন।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে অপরূপ সাজে সজ্জিত করার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও স্থানীয় সী-বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান। পুরনো ঝিনুক মার্কেট ভেংগে আটটি রঙ্গের ছাতার আদলে নতুনভাবে নির্মিত আধুনিক ঝিনুক মার্কেট ‘বীচ পার্ক মার্কেট’ সত্যি দেখার মতো। প্রতিটি মার্কেটে আটটি করে দোকান নির্মাণের স্পেস থাকলেও দোকানীরা নিজেদের সমঝোতার মাধ্যমে আটটি দোকানকে ষোলটি, ক্ষেত্রবিশেষে বিশটি দোকান ঘর তৈরী করেছে।  পাশে অনুরূপ আরো তিনটি

ছাতা মার্কেট নির্মাণাধীন রয়েছে। শামুক-ঝিনুক ও  প্রবালের দোকানের পাশাপাশি বার্মিজ পণ্যসামগ্রী, কস্মেটিক, ফাস্টফুড, কুলিং কর্ণার, শুটকি, স্টুডিও, মোবাইল সপসহ নানা দোকানের সমাহার রয়েছে এসব মাকের্টে। সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ মুখে কক্সবাজার জেলা পরিষদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় দৃষ্টিনন্দন বীচ গার্ডেন কাম পার্ক ও ২৬ টি দোকান সমৃদ্ধ ঝিনুক মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। বাগানের সম্মুখে লাবনী পয়েন্টে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির তত্ত্বাবধানে দু’তলা বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও জেলা প্রশাসনের স্থায়ী মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা রয়েছে। 

 

 কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত একটি মায়াবী ও রূপময়ী সমুদ্র সৈকত। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ এর রূপ পরিবর্তন করে। শীত-বর্ষা-বসন্ত-গ্রীস্ম এমন কোন সীজন নেই সমুদ্র সৈকতের চেহারা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রত্যুষে এক রকম তো মধ্যাহ্নে এর রূপ অন্য রকম। গোধুলি বেলার বীচের হাওয়া-অবস্থা আর রাতের বেলার আবহাওয়া-অবস্থার মধ্যে বিস্তর ফারাক। তাই তো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য ক্যাপ্টেন কক্স এর সমুদ্র সৈকত এত কদরের, এত পছন্দের। বিদেশি পর্যটকদের ইদানিং তেমন চোখে না পড়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে এখানে সুযোগ সুবিধা তাদের জন্য আহামরি তেমন কিছুই নেই। পর্যটকরা সী বীচে কোন ধর্মীয় সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে আসে না। তারা আসে সী-বীচের সাথে আলিঙ্গন করতে, স্নান করতে, এর সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে আর নির্ভেজাল নির্ঝঞ্জাট ও নিরাপদ পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস খেতে। অপমান কিংবা অপদস্ত হতে নিশ্চয় কেউ বীচে গমন করে না। কর্তৃপক্ষ সী-বীচের জনপ্রিয়তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন্ জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিবসে ওপেন কনসার্ট, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বীচ-ফুটবল, বীচ-ভলিবল, বীচ-ক্রিকেট প্রতিযোগিতা, জাতীয় ঘুরি উত্তোলনের উৎসব, বালু স্কালপ্চার নির্মাণসহ অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশে সার্ফিং-কে জনপ্রিয়  খেলা হিসেবে  গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সী-বীচের  লাবণী  পয়েন্টে সার্ফিং  ক্লাবের  জন্য  অস্থায়ী  সার্ফিং  কুটির  স্থাপনের  জন্য সাময়িক অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সম্প্রতি বীচ পুলিশ সংযোজন নিঃসন্দেহে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ছলনাময়ী ও মায়াবী সমুদ্র সৈকতে স্নান করতে গিয়ে প্রতি বছর মৃত্যুর ঘটনা সত্যি বেদনাদায়ক। স্নান করতে নামা পর্যটকদের আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। জোয়ার ও ভাটার সময় প্রদর্শনের জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে রয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী বিলবোর্ড ও ব্যানার। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ার-ভাটার জনসচেতনতা ও  শিক্ষামূলক  বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য সমুদ্র সৈকতে কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবনী পয়েন্টে এলসিডি টিভি মনিটর স্থাপনের জন্য কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। ইয়াসীর লাইফ গার্ড ও ওয়াচ বে লাইফ গার্ড এর সাহসী কর্মীরা অনেক পর্যটকের জীবন রক্ষা করেছে। জীবন রক্ষাকারী এ ধরনের জনমানব সেবামূলক আরো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে।  কক্সবাজার রূপালী সমুদ্র সৈকতে বীচ বাইক, জেট স্কী, ঘোড়ার গাড়ি বা ঘোড়া পর্যটকদের  জন্য আনন্দের খোরাক যোগায়। সমুদ্র সৈকতে অনেক চেঞ্জিংরুম, বাথরুম, টয়লেট স্থাপনের কারণে পর্যটকদের প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না যা কয়েক বছর আগেও পর্যটকদের জন্য কল্পনাতীত ছিল।

 

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মোৎসব শারদীয় দূর্গা পূজার মহান বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সময় সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের পদচারণায় সমুদ্র সৈকতটি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বান্দরবান পাবর্ত্য জেলা থেকেও প্রতিমা বিসর্জন দিতে এখানে সমাবেত হয়। আবহমানকাল থেকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিসর্জন অনুষ্ঠান উপভোগের নিমিত্তে লক্ষাধিক পূজারী ও পর্যটকের অসাম্প্রদায়িক মিলনমেলা ঘটে সমুদ্র সৈকতে। এ উপলেক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে গুরুত্ব সহকারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হয়। এছাড়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বর্ষাবাস আরম্ভ হওয়ার আগে বর্ষা মৌসুমে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন সমুদ্র সৈকতের পাশে স্থিত ঝাউবিথির ভেতরে গ্রুপে গ্রুপে পিকনিক আয়োজন করার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে পর্যটকদের ধারণা হতে পারে যে, সমুদ্র সৈকতে কোন উৎসব হচ্ছে কিনা। এটি কোন সামাজিক উৎসব নয়, ধর্মীয় উৎসবতো অবশ্যই নয়। অতি উৎসাহী কতিপয় সংবাদকর্মী এটিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবে প্রচার করে থাকে। বছরে এক থেকে দেড় মাস সময়কালে (জুন-জুলাই) সাপ্তাহিক বন্ধের   দিনে  এ ধরনের  পিকনিক   তথা  বর্ষার   উৎসব   আয়োজন   চলে আসছে

 কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সে অনেক দিন আগে থেকে। আনন্দের আতিশয্যে পিকনিকের নামে যাতে কেউ অনাকাঙ্খিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা অবতারণা করে পিকনিকের আনন্দঘন পরিবেশকে কলূষিত করতে না পারে এ বিষয়ে সচেতন থাকার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলেরই।